আহনাফের আর পরীক্ষা দিতে আসা হয়নি, শূন্য আসনে ফুল l

আহনাফের আর পরীক্ষা দিতে আসা হয়নি, শূন্য আসনে ফুল l
আহনাফের আর পরীক্ষা দিতে আসা হয়নি, শূন্য আসনে ফুল l

আহনাফের আর পরীক্ষা দিতে আসা হয়নি, শূন্য আসনে ফুল

বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফের (১৭) শূন্য আসনে ফুল রেখে শিক্ষকদের শ্রদ্ধাছবি: শিক্ষকদের সৌজন্যে

রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির স্থগিত পরীক্ষা আজ রোববার আবার শুরু হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা এসেছে। শুধু একটি আসন ফাঁকা। সেখানে রাখা একটি ফুলের তোড়া।

আসনটি শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফের (১৭)। সে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৪ আগস্ট নিহত হয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বরে সে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলি তার বুকের ডান দিক দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

আহনাফ একাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও পরে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সহিংসতায় অন্তত ৬২৬ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ৬৮ জন শিশু ও কিশোর। আহনাফ তাদেরই একজন।

কলেজের পরীক্ষা হলে শূন্য আসনটিতে এক তোড়া ফুল রাখার মধ্য দিয়ে আহনাফের শিক্ষকেরা তাকে স্মরণ করলেন। তোড়াটির পাশে সাদা কাগজে লেখা ছিল আহনাফের নাম।

শিক্ষকেরা জানান, গত ২ জুলাই কলেজে একাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়। তিনটি পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে বিক্ষোভ-সংঘাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। স্থগিত পরীক্ষা আজ নেওয়া শুরু হয়েছে।

বিএএফ শাহীন কলেজের উপাধ্যক্ষ শাকিলা নার্গিস প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের মনে হয়েছে, আহনাফের স্মরণে কিছু করা দরকার। তার প্রতি ভালোবাসা থেকে শূন্য আসনটিতে কলেজের পক্ষ থেকে ফুল রাখা হয়েছে। তিনি জানান, গত সপ্তাহে কলেজের প্রাত্যহিক সমাবেশে (অ্যাসেম্বলি) আহনাফের কথা স্মরণ করে দোয়া পাঠ করা হয়। কলেজের ফটকেও তার নামে ব্যানার ঝোলানো হয়েছে।

শাকিলা নার্গিস আরও বলেন, নিহত আহনাফসহ এই কলেজের যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হয়েছে, তাদের জন্য ২০ আগস্ট কলেজে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

আহনাফের পরিবার রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের কাছে মধ্য পাইকপাড়া এলাকায় বাস করে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সে স্থানীয় মডেল একাডেমি স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিল। এরপর মিরপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে বিএএফ শাহীন কলেজে ভর্তি হয়। আহনাফ নিহত হওয়ার পর মডেল একাডেমি স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের খেলার মাঠটিকে ‘শহীদ আহনাফ খেলার মাঠ’ হিসেবে নামকরণ করেছে।

আহনাফের বাবা নাসির উদ্দিন আহমেদ ও মা সাফাক সিদ্দিকী। তাঁদের দুই ছেলের মধ্যে আহনাফ ছিল বড়। ছোট ছেলে ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

আহনাফের বাবা নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর ছেলের শূন্য আসনে ফুলের তোড়ার ছবিটি অনেকে ‘শেয়ার’ করেছেন। আহনাফের মা সে কথা তাঁকে জানান। এর পর থেকে আহনাফের মা শুধুই কাঁদছেন। বারবারই বলছেন, ‘আজ আমার ছেলেটার পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল