প্লিজ আমাদের বাঁচান। সোমালিয়ান জলদস্যুরা আমাদের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ওপর হামলা করেছে

প্লিজ আমাদের বাঁচান। সোমালিয়ান জলদস্যুরা আমাদের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ওপর হামলা করেছে
প্লিজ আমাদের বাঁচান। সোমালিয়ান জলদস্যুরা আমাদের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ওপর হামলা করেছে
সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম

‘প্লিজ আমাদের বাঁচান। সোমালিয়ান জলদস্যুরা আমাদের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ওপর হামলা করেছে। তাদের হাতে রয়েছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র।’ এভাবেই বাঁচার আকুতি জানিয়ে মঙ্গল দুপুর আড়াইটার দিকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠান জাহাজে জিম্মি হওয়া ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ।

এদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিমের কাছে আরেকটি মেসেজ পাঠান জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান। তিনি জানান, তাদের মোবাইল ল্যাপটপসহ ব্যবহারের জিনিসপত্র নিয়ে নিচ্ছে জলদস্যুরা। তারপরও জাহাজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা মালিকপক্ষের ইন্টারনেট কানেকশন খোলা রাখতে বলা হয়েছে। যেন কোনো মেসেজ থাকলে গোপনে তা বাংলাদেশে পাঠাতে পারে।

এ বিষয়ে প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ সমকালকে বলেন, ‘ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসেন কাছ থেকে জলদস্যু আক্রমণ হওয়ার কথা প্রথম জানতে পারি আমরা। পরে তার সঙ্গে কথা হয়েছে জাহাজটির মালিকপক্ষেরও।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইনে সবার আগে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজটি পাঠান আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুল আলমের কাছে। তিনি জাহাজ নিয়ে দক্ষিণ চায়নাতে রয়েছেন। মেসেজটি তিনি আমাদের সভাপতির কাছে ফরোয়ার্ড করেন। পরে সন্ধ্যার দিকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার আরেকটি মেসেজ দিয়েছেন মালিকপক্ষের প্রধান নির্বাহীর কাছে। সেখানে তারা নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, জাহাজটি জলদস্যুরা সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিক ও ক্রুকে জিম্মি করেছে জলদস্যুরা। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল। পথে ভারত মহাসাগরে এটি জলদস্যুদের কবলে পড়ে।

জাহাজটিতে জিম্মি থাকা নাবিক ও ক্রুরা হলেন- ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ, চিফ অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ খান, দ্বিতীয় কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী, তৃতীয় কর্মকর্তা মো. তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এএসএম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, এবি মো. আনোয়ারুল হক, এবি মো. আসিফুর রহমান, এবি সাজ্জাদ হোসেন, ওএস জয় মাহমুদ, ওএস মো. নাজমুল হক, ওএস আইনুল হক, অয়েলার মোহাম্মদ শামসউদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস মো. নূর উদ্দিন ও ফিটার মো. সালেহ আহমেদ। 

‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পরে এর নাম দেওয়া হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। গত বছর এটি সংগ্রহ করে সাধারণ পণ্য পরিবহন করতে থাকে কেএসআরএম গ্রুপ। ২০১৬ সালে তৈরি হওয়া জাহাজটি লম্বায় ১৯০ মিটার।

এর আগেও অনেক বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু সোমালিয়ান জলদস্যুদের কাছে জিম্মি হন। এদের কেউ ২০ মাস পর, কেউ ১০ মাস পর জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পান। 

২০১২ সালে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ২০ মাসেরও বেশি সময় জিম্মি থাকার পর মুক্তি হন ৭ বাংলাদেশি নাবিক।

২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর ভারত মহাসাগর থেকে মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আলবেডো’কে আটক করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। ওই সময় তারা জাহাজটিতে থাকা ২২ জন কর্মকর্তা এবং ক্রুকেও জিম্মি করে। এই ২২ জনের মধ্যে ৭ জন ছিলেন বাংলাদেশি, ৭ জন পাকিস্তানি, ৬ জন শ্রীলঙ্কান ও একজন করে ভারতীয় এবং ইরানি নাগরিক। এদের সবাই মুক্তিপণ দিয়ে দীর্ঘ সময়ের পর মুক্ত হয়েছিলেন। 

কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’ সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায় একশ’ দিন