চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক

চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

উন্নত চিকিৎসার জন্য আগামী মঙ্গলবার লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বড় কোনো জটিলতা না হলে দলটির বিভিন্ন পর্যায় থেকে এই তারিখটিই চূড়ান্ত বলে জানানো হয়েছে।

সব ঠিক থাকলে মঙ্গলবার রাত ১০টায় কাতার এয়ারলাইন্সের একটি এয়ার-অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন খালেদা জিয়া। লন্ডনে পৌঁছে সরাসরি তার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা রয়েছে

বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে কিছুদিন থাকার পর খালেদা জিয়া যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। মেরিল্যান্ডের পূর্ব বাল্টিমোরে অবস্থিত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন তিনি।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি। ধারণা করা হচ্ছে, বেগম জিয়ার এই চিকিৎসায় কমপক্ষে দুই মাস সময় লাগতে পারে।

দলীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা সম্পন্ন হলেই বেগম জিয়া দেশে ফিরবেন। ফেরার পথে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারেন তিনি। এমনও আলোচনা আছে, চিকিৎসা শেষে মায়ের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে ফিরতে পারেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশযাত্রা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা যেমন চলছিল, তেমনি চলছিল প্রস্তুতিও। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি দুটি একসঙ্গে না এগুনোয় একাধিকবার বিদেশ যাত্রার তারিখ পরিবর্তন করতে হয়েছে।

তবে নতুন করে আর তারিখ পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে চিকিৎসক এবং দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে শনিবার বলেছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়া আগামী ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যেতে পারেন। এখন পর্যন্ত এটা ঠিক আছে, সেভাবেই কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ওইদিন রাতে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের রি-ফুয়েলিংয়ের জন্য দোহাতে থামা হতে পারে। পরদিন ভোরে বা সকালে লন্ডন পৌঁছে সোজা হাসপাতালে যাবেন তিনি।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে ২০২০ সালের মার্চে তৎকালীন সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পান তিনি।

মূলত এই সাময়িক কারামুক্তির পর থেকেই বেগম জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার এবং দল থেকে একাধিকবার দাবি জানানো হচ্ছিল। তবে প্রতিবারই শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তির কথা বলে তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি সরকার।

তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এর পরপরই তার বিদেশযাত্রা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়। তিনি কোন দেশে যেতে পারেন, সেটা নিয়ে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড ও পরিবার একাধিকবার বৈঠক করেছে। এই সময়ের মধ্যে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থাও দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য পারমিট করছিল না।

এমন অবস্থায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দীর্ঘ ভ্রমণের উপযোগী করে তোলা, কোনভাবে তাকে বিদেশে নেওয়া যায় এবং তার পাসপোর্ট জটিলতা নিরসনের ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে বেগম জিয়ার নতুন পাসপোর্ট করানো, ভিসা জটিলতা সব কিছু কেটে গেছে। তিনি যুক্তরাজ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের ভিসাও পেয়েছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, বিশেষ বিমানে খালেদা জিয়া এখন ভ্রমণেরও উপযোগী। ফলে তাকে বিদেশে নিতে তার পরিবার এখন সব দিক থেকে প্রস্তুত। জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে ৫-৬ জন চিকিৎসকসহ ১৫-১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যাবেন