কী অবিশ্বাস্য সাহসী যুবক ছিলেন সাঈদ: ড. ইউনূস

কী  অবিশ্বাস্য সাহসী যুবক ছিলেন সাঈদ: ড. ইউনূস
কী  অবিশ্বাস্য সাহসী যুবক ছিলেন সাঈদ: ড. ইউনূস

কী অবিশ্বাস্য সাহসী যুবক ছিলেন সাঈদ: ড. ইউনূস

রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়ার আবু সাঈদের পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়ার আবু সাঈদের পরিবার ও এলাকাবাসী আরও একবার কাঁদলেন। তাঁরা এবার কাঁদলেন নিহত সাঈদের প্রতি রাষ্ট্রের সম্মান প্রদর্শন দেখে। আজ শনিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং উপদেষ্টা পরিষদে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গিয়েছিলেন সাঈদের বাড়িতে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আবু সাঈদ এখন এক পরিবারের সন্তান নন, বাংলাদেশের যত পরিবার আছে, তাদের সন্তান। এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব এখন আমাদের। তাঁর (আবু সাঈদ) কথা স্মরণ হবে এই কাজ করার মধ্য দিয়ে।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ

আজ সকাল সাড়ে ১০টার পর হেলিকপ্টারে করে রংপুরের পীরগঞ্জে মেরিন একাডেমিতে পৌঁছান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এরপর সড়কপথে বেলা ১১টার দিকে তাঁরা আবু সাঈদের বাড়িতে পৌঁছান। সেখানে তাঁরা আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন।

এরপর সরকারপ্রধান যান আবু সাঈদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে। সেখানে আবু সাঈদ হত্যার বর্ণনা তুলে ধরেন তাঁর বাবা মকবুল হোসেন ও মা মনোয়ারা বেগম, ভাই, বোনসহ স্বজনেরা। আবু সাঈদের স্বজনদের কান্নায় অশ্রুসজল হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি দুই উপদেষ্টাও।

এ সময় আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন সরকারপ্রধানের কাছে সন্তান হত্যার বিচারের দাবি করেন। তিনি বলেন, শুধু আবু সাঈদ নন, এই ছাত্র আন্দোলনে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের হত্যার বিচার করতে হবে।

জাতীয় পতাকা দিয়ে সম্মাননা

কোটা সংস্কার আন্দোলনে মাথায় ও ডান হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে আন্দোলনে ছিলেন আবু সাঈদ। সরকারপ্রধানও তাঁর পরিবারকে জাতীয় পতাকা হাতে দিয়ে সম্মানিত করেন। এরপর আবু সাঈদের কবরের পাশে আবার দাঁড়ান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি আবু সাঈদকে স্মরণ করছি, যাঁর ছবি প্রত্যেক বাংলাদেশির স্মৃতিতে খোদাই করা আছে। কেউ এটি ভুলতে পারে না। কী অবিশ্বাস্যভাবে সাহসী যুবক ছিলেন তিনি! তিনি বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে যান এবং তার পর থেকে আন্দোলনরত তরুণ-তরুণীরা হার মানেনি। সামনে এগিয়ে গেছে এবং বলেছে, যত গুলি মারতে পারো মারো, আমরা এখানে আছি।’

পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ
পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আবু সাঈদ এখন এক পরিবারের সন্তান নন। বাংলাদেশের যত পরিবার আছে, তাদের সন্তান। যারা বড় হবে, স্কুল-কলেজে পড়বে, তারা আবু সাঈদের কথা জানবে এবং নিজে নিজেই বলবে, আমিও ন্যায়ের জন্য লড়ব। আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে।’

বাংলাদেশে জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সবারই সন্তান আবু সাঈদ বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোক—সবার ঘরের সন্তান এই আবু সাঈদ। কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন, কোথাও কোনো গোলযোগ যেন না হয়।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান বলেন, ‘আবু সাঈদ যেমন দাঁড়িয়েছেন, আমাদেরও সেভাবে দাঁড়াতে হবে। যারা পার্থক্য করে আমরা তেমন না। আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা বাংলাদেশেরই সন্তান। আবু সাঈদের মা সবার মা এবং সবার মা আবু সাঈদের মা। কাজেই তাঁকে রক্ষা করতে হবে, তাঁদের বোনদের রক্ষা করতে হবে, তাঁদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাই মিলে এটা করতে