মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ সেনেটরের চিঠি

মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ সেনেটরের চিঠি
মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ সেনেটরের চিঠি

সোহাগ সামী:

মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ সেনেটরের চিঠি

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রয়ি ব্যাক্তি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্রমাগত হয়রানি বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ১২জন সেনেটর।

দেশটির ইলিনয় রাজ্যের সেনেটর রিচার্ড জে. ডারবিন ও ইন্ডিয়ানার সেনেটর টড ইয়ংসহ সেনেটের ১২জন সদস্য স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই আহ্বান জানানো হয়, যেটির ওপরে তারিখ লিখা আছে ২২ই জানুয়ারি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো সেনেটরদের ওই চিঠিতে বলা হয়, “নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ক্রমাগত হেনস্তা এবং আরো বিস্তৃতভাবে আইন এবং বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহারের মাধ্যমে যেভাবে সরকারের সমালোচকদের টার্গেট করা হচ্ছে তা বন্ধ করার আহ্বান জানাতে আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে এই চিঠি লেখা হচ্ছে।”

গত পহেলা জানুয়ারি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জন আসামির বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেয়া হয়। একই সাথে আরেকটি ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের সাজা দেয়া হয়।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের নয়ই সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। সাজা ঘোষণার সাথে সাথে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। যার কারণে কারাগারে যেতে হয়নি মি. ইউনূসকে।

ওই রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আদালতে সাংবাদিকদের মি. ইউনূস বলেছিলেন, “যে দোষ আমরা করি নাই, সেই দোষের ওপরে শাস্তি পেলাম। এটা আমাদের কপালে ছিল, জাতির কপালে ছিল, আমরা সেটা বহন করলাম”।

এই মামলা ছাড়াও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আরো একাধিক মামলা রয়েছে।

২০২৩ সালের ২৮শে অগাস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৮টি মামলা করা হয়। এই মামলা দায়েরের পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং হিলারি ক্লিনটনসহ বিশ্বের ১৬০জন ব্যক্তি ও নেতা মি. ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দেন।

যারা এই বিবৃতি দিয়েছেন তাদের মধ্যে একশো’র বেশি নোবেল বিজয়ী রয়েছেন।

এই বিবৃতিতে, মি. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। একই সাথে তার বিরুদ্ধে মামলায় যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের ভেতরে নিরপেক্ষ বিচারক ও দেশের বাইরের আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলের মাধ্যমে পর্যালোচনার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

এছাড়া ২০২৩ সালের মে মাসে বিশ্বের ৪০ জন রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একই ধরনের খোলা চিঠি লিখেছিলেন।

অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা একটি মামলাও রয়েছে । এই মামলাকে ‘হয়রানিমূলক’ বলে উল্লেখ করেন তার পক্ষের

রায়ের দিন আদালতে মুহাম্মদ ইউনূস

গত পহেলা জানুয়ারি রায়ের দিন আদালতে মুহাম্মদ ইউনূস।

যা আছে সেনেটের চিঠিতে

অধ্যাপক ইউনূস হলেন পৃথিবীতে সাতজন ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম যিনি নোবেল, ইউএস কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল এবং ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পেয়েছেন।

গত ২২শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটরদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৫০টির বেশি নথি-প্রমাণহীন মামলা করা হয়েছে। “জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টুর্ক এবং মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে চলা কার্যক্রমে অনিয়মের বিষয়টি চিহ্নিত করেছে।”

এর মধ্যে অতি সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ছয় মাসের যে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে সেটিও রয়েছে। বর্তমানে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, এই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, মামলার গতি এবং বার বার ফৌজদারি আইনের ধারা ব্যবহারের বিষয়গুলো ইঙ্গিত করে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচারব্যবস্থার অপব্যবহার করা হচ্ছে।

“এছাড়া, মি. ইউনূসের বিরুদ্ধে বারবার এবং ধারাবাহিকভাবে হয়রানির বিষয়টি প্রতিফলিত করে যে, বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অনেক সদস্য ক্রমবর্ধমান কঠোর পরিস্থিতিতে একই অবস্থার মুখে পড়েন।”

এতে বলা হয়, ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে মি. ইউনূসের অগ্রণী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য অর্থনৈতিক বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির সুযোগ করে দিয়েছে।

২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস তাকে কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পুরস্কার দেয়। বৈশ্বিক দারিদ্র প্রতিরোধে ভূমিকার জন্য এই পুরস্কার দেয়া হয়।

“চলমান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এ ধরনের অবদান ক্ষুণ্ণ করা উচিত নয় বিশেষ করে একটি গণতান্ত্রিক দেশে,” চিঠিতে বলা হয়।

এতে আরো বলা হয়, “ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয়সহ বাংলাদেশের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের মূল্যায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র।”

“অধ্যাপক ইউনূসের হয়রানি বন্ধ এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের তাদের মুক্ত মতের চর্চার মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ নিশ্চিত করলে তা এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা করবে।