বাংলাদেশে শারদীয় দুর্গোৎসব কুমারীপূজায় মানুষের

বাংলাদেশে  শারদীয় দুর্গোৎসব কুমারীপূজায় মানুষের
বাংলাদেশে  শারদীয় দুর্গোৎসব কুমারীপূজায় মানুষের

শারদীয় দুর্গোৎসব কুমারীপূজায় মানুষের ঢল

অঞ্জলি, উলুধ্বনি, মন্ত্রোচ্চারণসহ নানা আয়োজনে সোমবার উদযাপিত হয়েছে দুর্গাপূজার অন্যতম অনুষঙ্গ কুমারীপূজা। ময়মনসিংহ থেকে তোলা -সমকাল

শারদীয় দুর্গোৎসবে গতকাল সোমবার মহাষ্টমীর দিনে কুমারীপূজায় মানুষের ঢল নামে। রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপে হাজার হাজার ভক্ত এবং দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে কুমারীপূজা উদযাপিত হয়েছে মহাসাড়ম্বরে।
পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিনে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা শুরু হয়। পূজা শেষে অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। বিকেল ৪টা ৫ মিনিট থেকে ৪টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠসহ কয়েকটি পূজামণ্ডপে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে দুর্গাপূজা আয়োজনের কারণে এসব মণ্ডপে পূজার সময়ের কিছুটা হেরফের ঘটে। সর্বত্র পূজা শেষে ভক্ত ও পূজারীরা অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলিতে অংশ নিয়েছেন।

উৎসবের চতুর্থ দিনে আজ মঙ্গলবার মহানবমী। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমীবিহিত পূজা শুরু হবে। পূজা শেষে যথারীতি পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ আরতি থাকবে। এ উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের পূজামণ্ডপে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে আরতি প্রতিযোগিতা।
গতকাল মহাষ্টমীর দিনে সকাল ১১টায় রামকৃষ্ণ মিশন পূজামণ্ডপে সব নারীতে মাতৃবুদ্ধি রূপ উপলব্ধি করতে আয়োজিত হয় কুমারীপূজা। এবার দেবীর প্রতীকীরূপে পূজা প্রদান করা হয় ৬ বছর বয়সী কুমারী দেবদৃতা চক্রবর্তীকে। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তাঁর নামকরণ করা হয় উমা। পূজার আগে কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন লাল শাড়ি, গয়না, পায়ে আলতা, ফুলের মালা এবং অলংকারে সাজানো হয় দেবীরূপে। পদ্মফুল হাতে দেবী পূজার আসনে বসার পর মন্ত্রোচ্চারণ আর স্তুতিতে তার বন্দনা করেন পূজারিরা। দেবীর মঞ্চে তাকে অধিষ্ঠানের আগে মন্ত্রোচ্চারণ ও ফুল, বেলপাতার আশীর্বাদ পৌঁছে দেওয়া হয় সবার কাছে। এরপর শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। হাজারো হিন্দু নারীর উলুধ্বনি আর ধর্মপ্রাণ মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে পূজা শেষ হয়। পূজা শেষে কুমারী দেবী দেবদৃতা চক্রবর্তী জগতের সকলের কল্যাণ কামনা করেন। প্রার্থনা করেন পৃথিবীর সব দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়ে যাক।

করোনার কারণে গত দুই বছর কুমারীপূজা হয়নি। রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ বলেন, মানুষ বিভিন্ন মানবীয়ভাবের অবলম্বনেই ঈশ্বরের আরাধনা করে। মাতৃভাবে ঈশ্বরের উপাসনা সনাতন ধর্মে অতি প্রাচীন। তিনি বলেন, নারীজাতির প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা সমাজ ও জীবনকে মহৎ করে তোলে, কুমারীপূজা এ শিক্ষাই দেয়।

কুমারীপূজাকে ঘিরে রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। মিশন গেটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পরই ভক্তদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মিলেছে। গোপীবাগ মোড় থেকে গোপীবাগ মাজার পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। দর্শনার্থী ও পূজারির ভিড়ে টিকাটুলী, ইত্তেফাক মোড়সহ ওই এলাকায় যানজট দেখা দেয়। মোড় থেকে হেঁটে মানুষ কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে মণ্ডপে প্রবেশ করেছেন। কুমারীপূজা শেষে প্রায় ৩৫ হাজার ভক্তের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। ঢাকা ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশনের নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, দিনাজপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী পূজামণ্ডপে গতকাল কুমারীপূজার আয়োজন করা হয়।

মহাষ্টমী পূজা শেষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পূজামণ্ডপেও ১০ হাজার ভক্তের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। পূজা শেষে সন্ধ্যায় মণ্ডপে ভোগ আরতির আয়োজন করা হয়।
রাজধানীসহ সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোতে গতকাল ভক্ত ও দর্শনার্থীর ব্যাপক সমাগম ঘটে।