নোয়াখালীতে চরহাজারীতে ‘হেলমেট বাহিনী’র হামলার পর বাড়িছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের পরিবার

নোয়াখালীতে চরহাজারীতে  ‘হেলমেট বাহিনী’র হামলার পর বাড়িছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের পরিবার
নোয়াখালীতে চরহাজারীতে  ‘হেলমেট বাহিনী’র হামলার পর বাড়িছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের পরিবার
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চর হাজারী ইউনিয়নে হেলমেট বাহিনী বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের বসতঘরে হামলা চালায়। এ সময় বাড়ির আসবাবও তছনছ করা হয়। আজ সকালে তোলাছবি: প্রথম আলো।

‘হেলমেট বাহিনী’র হামলা-ভাঙচুরের পর আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিএনপির নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা। এদিকে ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও পুলিশ হামলাকারীদের কাউকে আটক করতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে সেখানকার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পরিবার নিয়ে অনিরাপদ বোধ করছেন বলে জানা যায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত হেলমেট বাহিনীর ১৫-২০ জন সদস্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে চর হাজারী ইউনিয়নের উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাহাব উদ্দিনের বাড়িতে ও আরও চারটি বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট চালান। এতে এলাকার মানুষেরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।

বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন প্রথম সময়কে বলেন, হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা তাঁর বাড়িতে দুই দফায় ভাঙচুর চালিয়েছেন। তাঁর ঘরে থাকা টেলিভিশন এবং নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র, আসবাব ভাঙচুর ও তছনছ করে ফেলেছেন। তাঁর বৃদ্ধ মা-সহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে পিটিয়ে আহত করেছেন। হামলার সময় তিনি বাড়িতে না থাকায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। হামলাকারীরা যাওয়ার সময় বাড়ির লোকজনকে নানা হুমকি দিয়ে গেছেন। বর্তমানে তাঁর পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন, নির্বাচনের আগে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের যাঁকে যেখানে পাওয়া যাবে, কুকুরের মতো পেটানো হবে। এ পরিস্থিতি বিএনপির নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান বলেন, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের মির্জার নিয়ন্ত্রিত হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তাঁর বাড়িসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাঙচুর চালাচ্ছেন। গতকালও চর হাজার ইউনিয়নে চারজন বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। এ নিয়ে তফসিল ঘোষণার পর থেকে কোম্পানীগঞ্জে কমপক্ষে ২০ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চর হাজারী ইউনিয়নে হেলমেট বাহিনী বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের বসতঘরে হামলা চালায়। এ সময় বাড়ির আসবাবও তছনছ করা হয়। আজ সকালে তোলা
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চর হাজারী ইউনিয়নে হেলমেট বাহিনী বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের বসতঘরে হামলা চালায়। এ সময় বাড়ির আসবাবও তছনছ করা হয়। আজ সকালে তোলাছবি: প্রথম আলো।

মাহমুদুর রহমান অভিযোগ করেন, প্রতিটি হামলার সময় কিংবা ঘটনার পর তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমে থানা-পুলিশকে অবহিত করে আসছেন। কিন্তু তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেয় না। পুলিশের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকে হামলাকারীরা এসব অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলার বিষয়ে জানার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের মির্জা ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে কোম্পানীগঞ্জে হেলমেট বাহিনীর ধারাবাহিক হামলার বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম আজ শুক্রবার সকালে বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তাঁদের বলেন, অভিযোগগুলো আমাকে পাঠাতে।’

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় ভাঙচুরের খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কেউ আজ সকাল পর্যন্ত অভিযোগ নিয়ে আসেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে একাধিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানীগঞ্জে পুলিশ ব্যক্তিবিশেষের কথার বাইরে কিছু করতে পারে না। ওই ব্যক্তির আশ্রয়ে থাকা লোকজন এলাকায় যা ইচ্ছা তা-ই করেন