নারী ও জাতিগত কোটা রাখার সুযোগ নেই: নোবেল কমি

নারী ও জাতিগত কোটা রাখার সুযোগ নেই: নোবেল কমি
নারী ও জাতিগত কোটা রাখার সুযোগ নেই: নোবেল কমি

রোকেয়া সরণি ডেস্ক

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও মানবসভ্যতার জন্য অবদানই মুখ্য ভূমিকা রাখে। এখানে লিঙ্গ বা জাতিগত পরিচয় মুখ্য নয়। তাই লিঙ্গ বা জাতিগত কোটার ধারণাকে বাতিল করেছেন অ্যাকাডেমি প্রধান ও বিজ্ঞানী গোরান হ্যানসন। এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নোবেল পুরস্কারের জন্য যোগ্যতা বিচারের ক্ষেত্রে নারী বা জাতিগত কোনো ধরনের কোটা বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ নেই।

হ্যানসেন বলেন, আমরা ঠিক করেছি যে লিঙ্গ ও জাতিগত কোটা পদ্ধতি চালু করব না। আমরা চাই সব নোবেল বীজয়ীই যেন সমান সম্মানের অধিকারী হন। সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলো করার কারণে তারা সম্মান পাক, লিঙ্গ বা জাতিগত পরিচয় এখানে মুখ্য নয়। আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছার প্রতিফলন এতেই ঘটবে বলে মনে করেন এই বিজ্ঞানী।

ওই সাক্ষাৎকারে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের মহাসচিব গোরান হ্যানসন নোবেল জয়ের দৌড়ে খুব কমসংখ্যক নারী থাকার কথা স্বীকার করলেও বলেন, শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিই পুরস্কার পান। এসময় নিজের বক্তব্যের যথার্থতা তুলে ধরতে রসায়ন, অর্থনীতি ও পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী নারীদের কথা তুলে ধরেন। কমসংখ্যক নারীর নোবেল জয়ের পেছনে সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের নারী-পুরুষ ভেদাভেদের প্রতিফলন ঘটে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া অতীতে নারীরা কম নোবেল পাওয়ায় নারী নোবেলজয়ীর সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে দায়ী। এসব সত্ত্বেও পরিস্থিতি বদলাতে করার অনেক কিছুই আছে বলেও জানান তিনি।

এ বছর কোনো নারী বিজ্ঞানী পুরস্কার পাননি। কিন্তু গত বছর রসায়নে ইমানুয়েল চারপেন্টিয়ার ও জেনিফার ডাউডনা এবং পদার্থবিজ্ঞানে আন্দ্রেয়া গেজ এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার আগের বছর অর্থনীতি বিজ্ঞানে পেয়েছিলেন অন্দ্রেয়া গেজ।

উল্লেখ্য, ১৯০১ সালে চালু হওয়ার পর থেকে মাত্র ৫৯ নারী এই পুরস্কার অর্জন করেছেন, যা মোট পুরস্কারের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। এবছর ফিলিপিন্সের অনুসন্ধানী সাংবাদিক মারিয়া রেসা একমাত্র নারী হিসেবে আরেক সহকর্মী দিমিত্রি মুরাটোভের সঙ্গে এই পুরস্কা জেতেন। পুরস্কারজয়ী বাকি ১২ জনও পুরুষ।

নোবেল একাডেমি এখন থেকে মনোনয়নের ক্ষেত্রে যোগ্য নারীরা যেন সুষ্ঠু সুযোগ পান, সেটি নিশ্চিত করা হবে বলেন হ্যানসেন। তিনি আরও বলেন, নারী বিজ্ঞানীদের মনোনয়ন উৎসাহিত করার করার জোর প্রচেষ্টাও চালাচ্ছেন। কমসংখ্যক নারী নোবেলজয়ী কথা যেমন জানেন তারা, তেমনি পুরস্কার প্রদান কমিটি ও একাডেমির অবচেতন পক্ষপাতিত্ব সম্পর্কেও তারা ওয়াকিবহাল। বিষয়টির সুরাহা করতে নোবেল কমিটির সদস্যদের জন্য সমাজবিজ্ঞানীদের বক্তৃতা শোনানোর ব্যবস্থা করা ছাড়াও দলগত আলোচনা।

একইসঙ্গে হ্যানসেন বিজ্ঞানে নারীর স্বল্প উপস্থিতির বিষয়টিও মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, মনে রাখবেন যে পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে নারী অধ্যাপক মাত্র ১০ শতাংশ এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে আরও কম। নোবেল মনোনয়ন ও বিজয়ী নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। এক বা দুই দশক আগের আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে এখন পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু লিঙ্গ ও জাতিগত কোটার বিষয়টি মাত্র তিন সপ্তাহ আগে আলোচনায় আসে। নোবেল লরিয়েটদের গ্রহণযোগ্যতায় প্রশ্ন উঠতে পারে বিবেচনায় এই দাবি খারিজ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেও হ্যানসেন আশঙ্কা প্রকাশ করেন, কোটা থাকলে এরপর থেকে কোনো নারী পুরস্কার পেলে তিনি সে বিষয়ে সেরা হওয়ার কারণে না, নারী হিসেবে পুরস্কা পেয়েছেন বলে অনেকেই মনে করতে পারেন। ইমানুয়েল চারপেন্টিয়ার ও এস্থার ডুফলোর মতো বিজ্ঞানীরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য পুরস্কার পেলেও তখন তাদের অর্জনের পেছনে কোটা থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে, যা তাদের জন্য মর্যাদাকর হবে না।

মনোনয়নের জন্য আমন্ত্রিত নারী বিজ্ঞানীদের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করার কথাও বলেন হ্যানসেন। সেইসঙ্গে কমিটিতেও যেন নারীর সংখ্যা বাড়ে, সেটিও নিশ্চিত করতে চান তিনি। হ্যানসেন বলেন, সমাজের সবার সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব হবে না। তাই বিজ্ঞানের মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। তার জন্য আলাদা মনোভাব দরকার, যেন তারা পুরস্কার অর্জনের মতো আবিষ্কার করতে পারে।

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) নিউজল্যান্ডের পদার্থবিজ্ঞানী এবং লেখক লরি উইঙ্কলেস নোবেল একাডেমির বিরুদ্ধে সমালোচনা করে একটানা একাধিক টুইট করেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, একাডেমির পুরনো ধ্যানধারণা ধরে রাখা দেখে দুঃখিত হলেও অবাক হচ্ছি না। কমিটির এই মনোভাব থাকলে ম্যারি কুরি ১৯০৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেতেন না বলেও স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেননি তিনি।

সারাবাংলা/আরএফ/