কে এই খেজুর খাবে এখনই নাগালের বাইরে খেজুর

কে এই খেজুর খাবে এখনই নাগালের বাইরে খেজুর
কে এই খেজুর খাবে এখনই নাগালের বাইরে খেজুর

প্রথম সময় প্রতিনিধি

কে এই খেজুর খাবে এখনই নাগালের বাইরে খেজুর

চট্টগ্রামের বাজার পরিস্থিতি

পবিত্র রমজান আসতে আরও দুই মাস বাকি। এরই মধ্যে আকাশচুম্বী হয়ে নাগালের বাইরে চলে গেছে রোজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য খেজুরের দাম। দ্বিগুণ দামেও পণ্যটি মিলছে না বেশিরভাগ দোকানে। ক্রেতারা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে খেজুরের দাম। খেজুরের এই দাম ভোগাবে রমজানজুড়েই। অস্বাভাবিক এ দাম বৃদ্ধির জন্য খেজুর আমদানিকারকদের দায়ী করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এতে কমে গেছে বেচাবিক্রি। তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, ফলমূলকে বিলাসী পণ্যে অন্তর্ভুক্ত করায় খেজুরেও উচ্চ শুল্ক বসানো হয়েছে। এ কারণে আমদানি হচ্ছে চাহিদার তুলনায় নামেমাত্র। বাজারের সবচেয়ে কম দামি খেজুর হিসেবে পরিচিত জিহাদি ও দাবাস বিক্রি হচ্ছে ২৪০  থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায়। বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।

জিহাদি বা দাবাস নয়, সব খেজুরের দামই বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, আজওয়া খেজুর প্রতি কেজি ৯০০ টাকা, বরই খেজুর ৪০০, মরিয়ম খেজুর ৯০০ ও মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালেও চট্টগ্রামের ফলমণ্ডির পাইকারি বাজারে পাঁচ কেজি ওজনের ‘মরিয়ম খেজুর’ বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার টাকায়। পরের বছর ২০২৩ সালে সেই খেজুর বিক্রি হয় সাড়ে ৩ হাজার টাকায়।
সূত্রে জানা গেছে, দেশে খেজুরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজানেই দরকার হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালকর ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৩৮ টন খেজুর। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৭৩ টন খেজুর আমদানি করা হয়েছে। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯১ হাজার ৯০৪ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬২ হাজার ২৭৪ টন খেজুর আমদানি করা হয়।
তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত খেজুর আমদানি হয়েছে। যেসব খেজুর আমদানি করা হয়েছে সেগুলো খালাসের আগে আমরা যাচাই-বাছাই করেছি। নষ্ট, পচা খেজুর এবার আমদানি করা হয়নি।’
চট্টগ্রামের খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস কে ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ শফিউল আজম টিপু বলেন, ‘ডলার সংকট, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধিসহ আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খেজুরের দাম বেড়েছে। তবে পর্যাপ্ত খেজুর এবার আমদানি হয়েছে। সংকট হবে না।’
চট্টগ্রামের বিআরটিসি ফলমণ্ডিতে অবস্থিত ‘অ্যারাবিয়ান ডেটস সুপার শপের’ মালিক শহিদুল আলম বলেন, ‘দেশে অন্তত ২০ থেকে ৩০ ধরনের খেজুর আমদানি করা হয়। আমরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। প্রতি পাঁচ কেজি প্যাকে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা এবং ১০ কেজি প্যাকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশিতে আমরা খেজুর বিক্রি করে থাকি। খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজিপ্রতি মানভেদে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করেন।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (মেট্রো) মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘খেজুরের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি আমরাও শুনেছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেছি। দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার খেজুরের দাম কিছুটা বেশি। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন তাদের কেনা বেশি পড়ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন আমদানিকারকদের কাছ থেকে তারা বেশি দামে খেজুর কিনেছে। তবে এখন পর্যন্ত আমদানিকারকদের কাছ থেকে বিষয়টি যাচাই করা হয়নি। খেজুরের দাম কেন বাড়ছে তা আমরা তদারকি করছি।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ডলার সংকটে খেজুরের দাম বেড়েছে বলাটাও একটা অজুহাত। বিগত বছরে যে পরিমাণ খেজুর আমদানি করা হয়েছিল তা আরও দুই বছর চলবে, যা এখনও মজুত আছে। তেল, চিনিসহ অন্যান্য পণ্য ডলার সংকটের কথা বলে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। খেজুর আমদানিকারকরাও এই অজুহাত দিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করছে। তারা যে সংকটের কথা বলে, বাস্তবে সে রকম সংকট নেই। বাজার মনিটরিং না থাকায় যে যার মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।