ভুঁইফোঁড় কোম্পানিকে ১৬০ একর জমি বরাদ্দ

ভুঁইফোঁড় কোম্পানিকে ১৬০ একর জমি বরাদ্দ

সাবরিনা আক্তার 

রাজউক ঝিলমিল প্রকল্পে ফের আলোর ঝিলিক সাত বছরে একটি ইটও পুঁততে পারেনি মালয়েশিয়ার বিএনজি গ্লোবাল সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) কবজা থেকে অবশেষে মুক্ত হতে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প। কাগজে-কলমে মুস্তফা কামালের নাম না থাকলেও তারই আশীর্বাদপুষ্ট মালয়েশিয়াভিত্তিক একটি ভুঁইফোঁড় কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছিল কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্পের ১৬০ একর জমি। সাত বছর আগে বিএনজি গ্লোবালের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, ওই জমিতে তারা ১৪ হাজার ফ্ল্যাট তৈরি করে দেবে। পাশাপাশি লেক, খাল, খেলার মাঠসহ নানা সুযোগ-সুবিধার অবকাঠামো তৈরি করবে। রাজউকের নির্ধারিত দরে সেগুলো বিক্রি করে কোম্পানিটি তাদের নির্মাণ খরচ তুলে নেবে। চার বছরের মধ্যে ওই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সাত বছরে একটি ইটও পুঁততে পারেনি কোম্পানিটি।  বিভিন্ন সময় রাজউক ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার চেষ্টা করলেও মুস্তফা কামালের অদৃশ্য ইশারায় তা আর হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।  প্রকল্প পরিচালক ওয়াহিদ সাদিক বলেন, প্রকল্পের কাজে দেরি হওয়া নিয়ে রাজউক অনেক দেনদরবার করেছে। এক পর্যায়ে চুক্তি বাতিলেরও অনেক চেষ্টা হয়েছে। যখনই বাতিল করতে গেছে, তখনই রাজউক হোঁচট খেয়েছে। এমনকি বিএনজি গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মালয়েশিয়ার নাগরিক শরিফা সাবরিনা নামে একজন বাংলাদেশে এসে রাজউক চেয়ারম্যান, পূর্তমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, পূর্ত সচিবকে উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে গেছেন। পাশাপাশি আরও ৬০০ কোটি টাকার অনৈতিক আর্থিক সুবিধা দাবি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালে রাজউকের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিটি এমনভাবে করা হয়েছিল, কোনো শর্তই রাজউকের পক্ষে ছিল না। এ জ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিএনজি গ্লোবালের অফিসে গিয়ে দেখতে পান, কোম্পানিটির রয়েছে নামমাত্র একটি ছোট্ট অফিস। সেখানকার কর্মচারীরা রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পের কোনো তথ্যই জানেন না। তবে তারা মালয়েশিয়ায় অবস্থিত জিয়াংজি কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি নামে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। অথচ বিএনজি গ্লোবাল রাজউকের সঙ্গে চুক্তি করার সময় দাবি করেছিল, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ভারত ও ভিয়েতনামে তাদের সিস্টার কোম্পানি রয়েছে। এ-সংক্রান্ত তথ্যও সঠিক নয় বলে দূতাবাস অভিমত দেয়। কোম্পানিটি নির্মাণ সম্পর্কিত কোনো কাজের সঙ্গেও যুক্ত নয়। অথচ রাজউকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ঝিলমিল প্রকল্পে ৪৮০ বিঘা জমিতে বিএনজি গ্লোবাল ৮৫টি বহুতল ভবন নির্মাণ করবে। ৬০টি ভবন হবে ২০ তলার, ২৫টি হবে ২৫ তলার। মোট ফ্ল্যাট হবে ১৩ হাজার ৭২০টি। ফ্ল্যাটগুলোর আকার থাকবে ১ হাজার ৪০০ বর্গফুট থেকে ২ হাজার ২০০ বর্গফুটের মধ্যে। প্রতিটি ভবন হবে ভূমিকম্প প্রতিরোধী। এ জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা।  রাজউকের এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়াভিত্তিক এ কোম্পানির পেছনে সাবেক মন্ত্রী মুস্তফা কামাল সব সময় কলকাঠি নেড়েছেন। তারা এ প্রকল্পের কথা বলে চীনা একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে বলে রাজউক জানতে পেরেছে। লোটাস কামাল এখন পলাতক।  এ ব্যাপারে রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ঝিলমিল প্রকল্পের কাজ একদমই এগোয়নি। আমরা ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে চাই। এ জন্য গণমাধ্যমেরও সহযোগিতা প্রয়োজন