ধর্ষণবিরোধী গণপদযাত্রা পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা

ধর্ষণবিরোধী গণপদযাত্রা
পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা
রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে করা এই মামলায় আসামি হিসেবে বামপন্থী কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের ১২ জন নেতা–কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ বুধবার পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় এ মামলা করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে
রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল খায়ের বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলার এজাহারে যে ১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা হলেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ (২৬), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু (২৮) ও সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহম্মেদ (২৪), ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা মহানগরের সভাপতি আল আমিন রহমান (২৫), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সভাপতি সুমাইয়া শাহিনা (২৫), গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহাম্মদ চৌধুরী (২৫), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী আদ্রিতা রায় (২৩), ছাত্র ফেডারেশনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আরমান (৩০), হাসান শিকদার (২৫) ও সীমা আক্তার (২৫), বাম ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে জড়িত রিচার্ড (২৬) এবং অং অং মারমা (২৫) নামের এক তরুণ।
দেশব্যাপী ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন নিয়ে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ–প্রতিবাদের মধ্যে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়। নারী ও শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা কর্মসূচি করেন তাঁরা। গতকাল বেলা তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। সেটি শাহবাগ মোড় পেরিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পৌঁছালে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে যান আন্দোলনকারীরা।

অপর দিকে এ ঘটনা নিয়ে বিক্ষোভকারীরা বলছে, শান্তিপূর্ণ ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। গতকালের ওই ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ আন্দোলনকারীদের মারধর করছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আন্দোলনকারীরা পুলিশ সদস্যদের মারধর করেছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য
গতকালের ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবির বিষয়ে আজ পুলিশ সদর দপ্তর গণমাধ্যমে বক্তব্য পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ঘটনার ভিডিও চিত্র দেখলে পরিষ্কার হয় যে উত্তেজিত মিছিলকারীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করার পর পুলিশ তাঁদের প্রতিহত করে। কিন্তু প্রকাশিত ছবিতে এ সত্য আড়াল করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্যে আরও বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামের প্ল্যাটফর্মের প্রায় ৬০–৭০ জনের একটি দল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রার চেষ্টা করে। পুলিশ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার কারণে পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ পবিত্র রমজানে ঘরমুখী মানুষের নির্বিঘ্ন যাতায়াত ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বিক্ষোভকারীদের নিবৃত্ত হওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ জানায়। কিন্তু তাঁরা পুলিশের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। তাঁদের অতর্কিত হামলায় ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী কমিশনার গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া হামলাকারীদের আঘাতে রমনা বিভাগের উপকমিশনারসহ পাঁচজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে এরূপ খণ্ডিত সংবাদ ও ছবি প্রকাশ কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। পুলিশ সদর দপ্তর গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে কিছু উচ্ছৃঙ্খল জনতা পুলিশের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এসব আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছে