বাংলাদেশে দ্রব্যমুল্য কেন কমে না?পেঁয়াজ রপ্তানির খবর কি হচ্ছে?
৬ দেশে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এসব দেশে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে দেশটির কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংবাদে বলা হয়েছে। তবে কী পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি হবে, কিংবা কবে থেকে রপ্তানি হবে, সে ব্যাপারে ভারতীয় গণমাধ্যম কিছু জানাতে পারেনি।
যেসব দেশে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে, সেই দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, বাহরাইন, ভুটান ও নেপাল।
গতকাল রোববার বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম ঢাকায় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে রোজার আগেই ভারত থেকে পেঁয়াজ ও চিনি আসবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। ভারত সফরে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে আশ্বাস পেয়েছেন বলে তিনি জানান। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভারত ছয়টি দেশে সরকারি পর্যায়ে পেঁয়াজ রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে—এমন খবর তিনি ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছেন। এরপর দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, এ–সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্তের নথি তাঁরা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম প্রথম আলোকে আরও বলেন, ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ ও এক লাখ টন চিনি আমদানির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ভারতের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ উঠিয়ে নেয়নি। তবে দেশটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে। ওই খবরে আরও বলা হয়, ঠিক কী পরিমাণে পেঁয়াজ ভারত সরকার রপ্তানি করবে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর কবে থেকে এই রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হবে, সে বিষয়েও জানাতে পারেনি ইকোনমিক টাইমস।
ভারতীয় বড় রপ্তানিকারকেরা গত রোববার সে দেশের সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিক এলাকায় ইতিমধ্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪০ রুপি থেকে ১৩ রুপিতে নেমে এসেছে। রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে দেশটিতে পেঁয়াজের এই অন্যতম উৎপাদনস্থলের কৃষকেরা তা প্রত্যাহারের জন্য বিক্ষোভ করে আসছিলেন। নাসিক জেলা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতি বেশ কয়েক দফায় প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করে।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় গত ৭ ডিসেম্বর চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে এর আগে গত আগস্টে দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকার ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছিল। এরপর গত অক্টোবরে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয় টনপ্রতি ৮০০ মার্কিন ডলার। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে এসব পদক্ষেপ খুব বেশি কার্যকর না হওয়ায় পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার।
নিষেধাজ্ঞার খবর জানার পরপরই বাংলাদেশের বাজারে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে তা কেজিপ্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ ওঠার পর বাজারে দাম কিছুটা কমে আসে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম অবশ্য শেষ হয়ে আসার কারণে বাজারে কিছুদিন ধরে আবার পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আর কয়েক সপ্তাহ পর হালি জাতের পেঁয়াজ বাজারে এলে এই পণ্যের দাম কমে আসবে।
গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বাজারে অবশ্য পেঁয়াজের দাম এখন বেশ চড়া। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আজকের বাজারদরের প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকার বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের এই সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কেনা যেত। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ২৩৮ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়ে আসায় দাম একটু বেড়েছে। এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ আসলে সেটা ভালো হবে।’ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হলে তখন কেউ চাইলেই দাম বাড়াতে পারে না বলে মনে করেন তিনি।
রাজধানীর বাদামতলীভিত্তিক আমদানিকারক মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। জিটুজি ভিত্তিতে আমদানির অনুমতি হলেও সরকারের কাছ থেকে চাহিদাপত্র নিয়ে বেসরকারি আমদানিকারকেরা এর আগে পেঁয়াজ দেশে এনেছিল বলে তিনি জানান।