বাংলাদেশে মহাসপ্তমীতে সুস্থ পৃথিবীর প্রার্থনা

বাংলাদেশে  মহাসপ্তমীতে সুস্থ পৃথিবীর প্রার্থনা
বাংলাদেশে  মহাসপ্তমীতে সুস্থ পৃথিবীর প্রার্থনা

স্টাফ করেসপন্ডে

মহাসপ্তমীতে সুস্থ পৃথিবীর প্রার্থনা

 sharethis sharing buttonঢাকা: নানা আয়োজনে পালিত হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন তথা মহাসপ্তমী। সকালে নবপত্রিকা প্রবেশ, নবপত্রিকা স্নান, নবপত্রিকা স্থাপন, মহাস্নান, সপ্তমী হিত পূজা সমাপ্ত এবং ভক্তদের অঞ্জলিদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহাসপ্তমীর বিভিন্ন আয়োজন। দিনভর চলে আরও নানা আনুষ্ঠানিকতা। এদিন দেবী দুর্গার কাছে সবার জন্য সুস্থ একটি পৃথিবীর প্রার্থনা জানিয়েছেন ভক্তরা।

বুধবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন মণ্ডপে মহাআড়ম্বরে মহাসপ্তমী উদযাপন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল ভক্তদের সমাগম। দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা জানানোর পাশাপাশি উৎসব আয়োজনে মেতে উঠেছিলেন তারা।

রাজধানীর মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, শিশু থেকে বৃদ্ধ— সব বয়সী মানুষ সেখানে উৎসবে সামিল হতে উপস্থিত হয়েছেন। মণ্ডপে শিশুরা মেতে ওঠে হই-হুল্লোড়ে, বয়োজ্যেষ্ঠরা হাত জোড় করে মায়ের শিয়রে বসে প্রার্থনা করেন।

সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পালনে মন্দির কর্তৃপক্ষকে খুবই কঠোর দেখা গেল। মণ্ডপে ভক্ত-দর্শনার্থীদের লাইন ধরে প্রবেশের শুরুতেই ছিল হ্যান্ড স্যানিটাইজের ব্যবস্থা। এরপর প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যেকের হাতে বিতরণ করা হয় মাস্ক। স্বেচ্ছাসেবকরাও সবাইকে সতর্ক করিয়ে দিচ্ছিলেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে।

মহাসপ্তমীর বিভিন্ন আচার সম্পর্কে মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির কমিটির প্রধান পুরোহিত ভবেশ মুখার্জি সারাবাংলাকে বলেন, মহাসপ্তমীতে নবপত্রিকা প্রবেশ, নবপত্রিকা স্নান, নবপত্রিকা স্থাপন, মহাস্নান, সপ্তমী হিত পূজা সম্পন্ন হয়েছে। ভক্তরা অঞ্জলি দেওয়ার মাধ্যমে মা দুর্গার আরাধনা করেছেন। মায়ের কাছে অর্চনা দিয়েছেন, প্রার্থনা করেছেন। সবাই প্রার্থনা জানিয়েছেন, এই করোনা মহামারি থেকে যেন সবাই রক্ষা পায়। পৃথিবী যেন সুস্থ হয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সব মানুষের যেন মঙ্গল হয়— সেই প্রার্থনাই সবাই করেছি।

মহাসপ্তমীতে সুস্থ পৃথিবীর প্রার্থনা
পূজার সার্বিক আয়োজন নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক উপকমিটির আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ দাস লাবু সারাবাংলাকে বলেন, পূজা উপলক্ষে মোট ৪৮ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। ৩২ জন স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। মন্দিরের সামনে, প্রবেশের মুখে, ভেতরের বিভিন্ন প্রান্তে এবং বের হওয়ার রাস্তায় স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া জরুরি যেকোনো প্রয়োজন সামলানোর জন্য ১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল তৈরি করা আছে। সুশৃঙ্খলভাবে পূজা পালনের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে।

মহাসপ্তমীর সার্বিক আয়োজন সম্পর্কে মিরপুর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তুষার কান্তি সাহা সারাবাংলাকে বলেন, সকালে মাঙ্গলিক ক্রিয়ার মাধ্যমে দেবী দুর্গার আবাহন করা হয়েছে। বিভিন্ন আচারের মাধ্যমে পূজা সম্পন্ন করা হয়েছে এবং ভক্তরা অঞ্জলি দিয়েছেন। সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজ সপ্তমীতে আমাদের অন্যতম আয়োজন হচ্ছে— শারদ সংকলন ‘অর্ঘ্য’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হবে। এই সংকলন আমাদের একটি অন্যতম কাজ। প্রতিবছরই এটি প্রকাশিত হয়। এখানে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কিত লেখা প্রকাশিত হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও সংসদ সদস্য আগা খান এর উদ্বোধন করবেন। আজ আমাদের মহাসপ্তমীর আয়োজন এভাবেই সাজানো হয়েছে।

পূজার আয়োজন এবং শারদ সংকলন ‘অর্ঘ্য’ বিষয়ে মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী সুকুমার শর্মা বলেন, আজ থেকে ১৪ বছর আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই পূজার উদযাপন হয়ে আসছে। প্রতিবার পূজাতেই আমাদের মন্দিরের একটি বার্ষিক সংকলন থাকে। সেটির নাম ‘অর্ঘ্য’। সেই শারদ সংকলনের আজ মোড়ক উন্মোচন হবে। এই সংকলনে রয়েছে আমাদের মন্দিরের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিবরণ। আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক কার্যক্রমের একটি প্রতিফলন হচ্ছে ‘অর্ঘ্য’।

মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির কমিটির সভাপতি অসীম কুমার রায় শিশির সারাবাংলাকে বলেন, সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা। মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতি দুর্গাপূজায় আমাদের যে কার্যক্রমটি সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে তা হচ্ছে শারদ সংকলন ‘অর্ঘ্য’র প্রকাশনা। এই সংকলন সবখানে প্রশংসিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটি আমাদের প্রথম, দ্বিতীয় স্থানের স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের ঐতিহ্য হলো স্থানীয় মেয়র এই সংকলনের উদ্বোধন করেন। এর আগে প্রয়াত আনিসুল হক করেছিলেন, এবার মেয়র আতিক এটির উদ্বোধন করবেন।

অসীম কুমার রায় শিশির আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে আমরা এই উৎসবটি পালন করে থাকি। মা দুর্গার কাছে এটাই প্রার্থনা— পৃথিবীর সব মানুষের যেন মঙ্গল হয়, সবাই যেন সুখে থাকে, সুস্থ থাকে।

সারাবাংলা/এসএসএ/টিআর